(CLICK ON CAPTION/LINK/POSTING BELOW TO ENLARGE & READ)

Sunday, February 17, 2013

পাহাড়ে দু’দফায় ৪৮ঘণ্টা করে বন্‌ধ ডেকে ফের সঙ্ঘাতের পথে মোর্চা


পাহাড়ে দু’দফায় ৪৮ঘণ্টা করে বন্‌ধ ডেকে ফের সঙ্ঘাতের পথে মোর্চা

দীপক হোড়রায়

কালিম্পঙ, ১৭ই ফেব্রুয়ারি— পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ে দু’দফায় ৪৮ঘণ্টা করে বন্‌ধ ডাকলো গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। মার্চের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে দু’দিন করে এই বন্‌ধের কথা রবিবার ঘোষণা করেছেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ। 

এদিন কালিম্পঙ মেলা গ্রাউন্ডে এক সমাবেশে আগামী ১৪-১৫ই মার্চ এবং ২১-২২শে মার্চ জি টি এ অন্তর্ভুক্ত এলাকায় এই বন্‌ধের কথা ঘোষণা করেন গুরুঙ। এর আগে গত ৯ই ফেব্রুয়ারি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ডাকে পাহাড়ে ১২ঘণ্টার বন্‌ধ হয়েছে। এছাড়াও আগামী ৯ থেকে ২৭শে মার্চ পার্বত্য এলাকার তিন মহকুমায় কেন্দ্র, রাজ্য সরকার এবং জি টি এ-র সমস্ত দপ্তর অচল করে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন জি টি এ প্রধান গুরুঙ। 

নতুন করে এই বন্‌ধ ও নানা কর্মসূচীর ঘোষণায় পাহাড়ে ফের শঙ্কা-উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পাহাড়ের মানুষের কথায় বারেবারেই উঠে আসছে এব্যাপারে রাজ্য সরকারের হঠকারিতার কথাই। এদিনের সমাবেশে বিমল গুরুঙ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন মোর্চার সচিব রোশন গিরি, কালিম্পঙের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী, সারা ভারত লেপচা অ্যাসোসিয়েশনের হেমন্ত লেপচা, পি অর্জুন প্রমুখ। রবিবারের খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও বড় সমাবেশ দেখে খুশি মোর্চা নেতারা হুঁশিয়ারি ছুঁড়েছেন, যাঁরা বলছিলেন পাহাড়ে মোর্চার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে তাঁরা আজ কী বলবেন। 

এদিন শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, গোর্খাল্যান্ডের জন্য শেষ লড়াই শুরু করতে হবে। তেলেঙ্গানা পৃথক রাজ্য হলে ১০৭বছরের পুরানো পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি কেন মানা হবে না। বিমল গুরুঙ বলেন, একসময় তৃণমূল কংগ্রেস আমাদের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছিলো। আজ সুর পালটেছে। রাজ্য সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করে গুরুঙ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তো রাজ্যই সামলাতে পারছেন না। আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। প্রকাশ্যে রাস্তায় মারামারি করছে তাঁর দল। পুলিসকে গুলি করে খুন করছে। আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির দাবি জানান গুরুঙ। 

মোর্চা সভাপতির অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিসি নিয়েছেন। বিমল গুরুঙ বলেন, পাহাড় এখনও শান্ত আছে। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই আন্দোলন করতে চাই। কিন্তু রাজ্য সরকারই অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করছে। কোন গোলমাল হলে তারজন্য দায়ী থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। জি টি এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বিমল গুরুঙ বলেন, গত সফরে মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিঙে উন্নয়নের বার্তা নিয়ে আসেননি। উনি ষড়যন্ত্র করতে এসেছিলেন। 

তিনি জানান, আগামী ৩রা মার্চ থেকে ২৪ শে মার্চ পার্বত্য এলাকার তিন মহকুমা জুড়ে গোর্খা নারীমোর্চা আন্দোলন শুরু করবে। ১৯শে ফেব্রুয়ারি মোর্চার সমস্ত ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রাতে মশাল মিছিল করবে। 

বিমল গুরুঙ এদিনের সভাতেও অভিযোগ করেন, জি টি এ-র কাজে অবাঞ্ছিতভাবে হস্তক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার। আমাদের না জানিয়েই আগে থেকেই অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করার কোন অধিকার নেই তাদের। আমাদের বিধায়করা এবিষয়ে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন। জি টি এ-তে আমরা কতদিন থাকবো তা সময়ের অপেক্ষা। স্যালাইন দিয়ে জি টি এ-কে চালানো হচ্ছে। এদিনও তিনি পাহাড়বাসীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, আমরা লেপচাদের উন্নয়নের বিরোধী নই। সরকারই ওদের আমাদের বিরোধী করে তুলেছে। তিনি রাজ্য সরকারকে ‘দুশমন’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ওরা রাজ্যের এক মন্ত্রীর হাত থেকে সরবত খেয়ে অনশন তুলে নিলেন। এই সরকার আমাদের দুশমন। ওরা কালিম্পঙের কোন প্রবীণ নাগরিকের হাত থেকে সরবত নিয়ে অনশন প্রত্যাহার করে নিতে পারতেন। এপ্রসঙ্গেই তিনি লেপচা সম্প্রদায়ের নেতা সিমিকের তীব্র সমালোচনা করেন। বিমল গুরুঙ বলেন, লেপচাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সহ পাহাড়ের সব ভাষাভাষী মানুষকে নিয়েই আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। তিনি বলেন, আগামী ৩১শে মার্চ আমরা শিলিগুড়ি সংলগ্ন সুকনাতে কেন্দ্রীয় সমাবেশ করবো। সেখান থেকে আন্দোলনের নতুন পথ ঘোষণা হবে। 

মোর্চার সচিব রোশন গিরি বলেন, গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে দিল্লিতে ধরনা চলছে। বাজেট অধিবেশনকে কেন্দ্র করেই আমাদের আন্দোলনকে আরো তীব্র করে তুলতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সারা ভারত লেপচা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে হেমন্ত লেপচা গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, পাহাড়জুড়ে আরো অনেক লেপচা সম্প্রদায়ের মানুষ আছেন, তারা গোর্খাল্যান্ডের পক্ষেই। বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রায়শই বলে থাকেন ‘পাহাড় হাসছে’। একথা বলার কোন মূল্য নেই। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে নিয়ে পাহাড় সবসময়ই হাসছে। পাহাড়ের মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলুন। লেপচাদের উন্নয়নের জন্য যা করার তা জি টি এ-র মাধ্যমেই করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর উসকানিতেই এই বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কালিম্পঙের দু’একজন সমগ্র লেপচা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নন। মোর্চা নেতা পি অর্জুন পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্স নিয়ে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি জানান।

No comments:

Post a Comment