(CLICK ON CAPTION/LINK/POSTING BELOW TO ENLARGE & READ)

Tuesday, February 19, 2013

ভোটের আগে অন্তত মুন্নাকে গ্রেপ্তার নয়, সিদ্ধান্ত তৃণমূলে


ভোটের আগে অন্তত মুন্নাকে গ্রেপ্তার নয়, সিদ্ধান্ত তৃণমূলে

নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা, ১৯শে ফেব্রুয়ারি — রাজ্যের তিনটি বিধানসভার উপনির্বাচনের আগে কিছুতেই ‘ধরা পড়ছেন’ না মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না। কিন্তু তারপর তাকে ধরা পড়ার জন্য ‘প্রস্তুত’ হতে হবে—দলের ওই ফেরার নেতার কাছে এই বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান মন্ত্রী মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ‘‘ইকবালের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ যার, দলের সেই নেতার মাধ্যমেই মুখ্যমন্ত্রী এই বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছেন।’’ প্রসঙ্গত, পুলিস খুনের ঘটনায় ইকবালের হয়ে সর্বাধিক সাফাই দিয়েছিলেন রাজ্যের পৌরমন্ত্রী, কলকাতা বন্দরের বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম। ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। কারণ কলকাতা ছেড়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি এখন নলহাটিতে উপনির্বাচনে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করার কাজে রয়েছেন। 

অন্যদিকে, সি আই ডি-র গোয়েন্দাদের কাছে পুলিস খুনে প্রধান অভিযুক্ত শেখ সুভান জানিয়েছে যে, গুলি চালানোর পরেই সে আগ্নেয়াস্ত্রটি ফেরত দিয়ে দিয়েছিল ইকবালেরই এক ঘনিষ্ঠের কাছে। অস্ত্রটি বেআইনী কিনা সুভান জানাতে পারেনি। কিন্তু গোয়েন্দারা নিশ্চিত সুভানের ব্যবহার করা অস্ত্রটি বেআইনী। মঙ্গলবার সি আই ডি-র এক অফিসার জানিয়েছেন, ‘‘ইকবালকে হেফাজতে পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই সেই আগ্নেয়াস্ত্রটির বিষয়ে জানার চেষ্টা হবে। কারণ খুনের অস্ত্র না পেশ করতে পারলে আমরা (সি আই ডি) আরো একদফা বেইজ্জত হবো আদালতে।’’

আগামী ২৩শে ফেব্রুয়ারি, শনিবার রাজ্যে নলহাটি, রেজিনগর এবং ইংরেজবাজার বিধানসভার উপনির্বাচন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে ওই তিনটি নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজবাজার এবং রেজিনগরে রাজ্যের দুই মন্ত্রী যথাক্রমে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবং হুমায়ুন কবীর তৃণমূলের প্রার্থী। এই পরিস্থিতিতে গার্ডেনরিচ কাণ্ড নিয়ে নতুন কোন চাঞ্চল্য এখন চাইছেন না মমতা ব্যানার্জি। গত ১২ই ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচের ঘটনার পর তিনবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে ইকবালকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। কিন্তু তাতে মত ছিল না পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ ওরফে ববি হাকিমের। ববির সঙ্গে কথা বলেই নিজের অবস্থান দলকে জানিয়েছিলেন মহম্মদ ইকবাল। তখন মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন কলকাতার বাইরে, দীঘায়। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুলিস ইকবালকে ধরার সাহস দেখায়নি। যদিও কলকাতা পুলিসের কেস ডায়েরি বলছে তারা খুনের পর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ইকবালের খোঁজে ছ’বার তল্লাশি চালায়। কোনবারই তাকে পাওয়া যায়নি। মমতা ব্যানার্জি কলকাতায় ফেরেন ১৪ই ফেব্রুয়ারি। সেদিনই কলকাতা পুলিসের কমিশনার রঞ্জিৎকুমার পচনন্দাকে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই আত্মগোপনে চলে যায় কলকাতা কর্পোরেশনের ১৫নং বরো কমিটির চেয়ারম্যান ইকবাল। সি আই ডি-র সূত্র জানাচ্ছে, ‘‘আমাদের কাছে যা খবর মুন্না কলকাতার আশেপাশেই কোথাও আছে। দলের নেতাদের সঙ্গে তার প্রতিদিনকার যোগাযোগও রয়েছে।’’ মুন্না গ্রেপ্তার হলে স্বাভাবিকভাবেই পুলিসকর্মী তাপস চৌধুরী খুনের ঘটনায় আরো চাঞ্চল্য তৈরি হবে। কতগুলি প্রশ্ন তখন অবধারিত হবে। প্রথমত, সুভান বলতে পারছে না সেই আগ্নেয়াস্ত্রটি কোথায়। সি আই ডি-কে সে জানিয়েছে ইকবালের এক ঘনিষ্ঠকে সে অস্ত্রটি ঘটনার দিনই, বাড়িতে যাওয়ার আগে দিয়ে দেয়। অস্ত্রটি নিঃসন্দেহে বেআইনী। ইকবালকে অস্ত্রের বিষয়ে জেরার মুখে পড়তে হতে পারে। দ্বিতীয়ত, সুভান দাবি করেছে, ১২ই ফেব্রুয়ারি কলেজের সামনে হাঙ্গামা করার ছক হয়েছিল। সেই জন্য তারা ‘প্রস্তুত’ও ছিল। সবটাই ‘চেয়ারম্যান সাব’ অর্থাৎ মহম্মদ ইকবাল জানতেন। এই বিষয়েও প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে ইকবালকে। ইতোমধ্যেই গার্ডেনরিচ কাণ্ড নিয়ে সরকার এবং শাসকদল যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়েছে। সুব্রত মুখার্জি, মদন মিত্র, অরূপ বিশ্বাস, হায়দার আজিজ সফি, মণীশ গুপ্ত, অমিত মিত্রর মতো বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র শোভন চ্যাটার্জিসহ কর্পোরেশনের কয়েকজন মেয়র পারিষদ ইকবালকে আড়াল করতে ফিরহাদ হাকিমের এইভাবে প্রকাশ্যে নেমে পড়া মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা মনে করছেন, উপনির্বাচনে গার্ডনরিচ ঘটনার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তাঁরা এই মনোভাব ব্যক্ত করার সাহস দেখাননি। মমতা ব্যানার্জি নিজেই ফিরহাদ হামিকের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব, বিশেষত মুকুল রায় এখনো নিশ্চিত নন যে, ইকবাল ধরা দেবে। কারণ সে ধরা পড়লে বন্দর এলাকার যাবতীয় ক্ষমতা চলে যেতে পারে সামসুজ্জামান আনসারির হাতে — এই আশঙ্কা রয়েছে ফিরহাদ হাকিমের মধ্যে। তিনি তা সরাসরি জানিয়েছেন মুকুল রায় ও মমতা ব্যানার্জিকে। কিছুতেই সামসুজ্জামান আনসারির ক্ষমতাবৃদ্ধি চায় না তৃণমূলের নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে আদৌ ইকবাল ধরা পড়বে বা দেবে কিনা—তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তাই উপনির্বাচনের পরেও তাকে গ্রেপ্তার করানো হবে কিনা, তা নিয়ে কোন স্থির সিদ্ধান্তে তৃণমূল আসতে পারেনি।

No comments:

Post a Comment