(CLICK ON CAPTION/LINK/POSTING BELOW TO ENLARGE & READ)

Friday, June 14, 2013

MAMATA BANERNJEE, CHIEF MINISTER: ভাটিয়ালি খতিয়ান


ভাটিয়ালি খতিয়ান

পরাণ মাঝি

মাননীয়া ক্ষমতায় এলেন।

পায়ে হাওয়াই চটি। যেমন সাধারণ মানুষের থাকে তেমন। পরণে সাধারণ কাপড়। যেমন সাধারণ মানুষের থাকে তেমন। মুখে আটপৌরে হাসি। যেমন সাধারণ মানুষের থাকে তেমন। বাঁহাতে বহুমূল্যবান আইপ্যাড। যেমন সাধারণ মানুষের থাকে না। তেমন।

মাননীয়া এসেই সাধারণ মানুষের স্বার্থে, বামপন্থীদের চুপ করে থাকতে বললেন ১০ বছর। তারপর তিনি কাজে ডুব দিলেন। এবং ডুবন্ত অবস্থায় ভাতঘুম দিলেন। এবং ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেলেন পাঁচ বছরের কাজ এক বছরেই হয়ে গেছে। বাকি চার বছরের কথা ভেবে ঘুম আরও গভীর হলো। সেই গভীরে গিয়ে হাজির হলেন মাননীয়ার যত পারিষদ। সকলেই উল্লসিত। লেটস্‌ সেলিব্রেট!

দিকে দিকে উৎসব শুরু হলো। জামা-কাপড় উৎসব। ঘটি-বাটি উৎসব। মা-মাটি উৎসব। ইলিশ-চিংড়ি উৎসব। টলি-বলি উৎসব। মানুষ-ফানুস উৎসব। শিল্প-শিল্প উৎসব। কত উৎসব! শেষ নেই।

মাননীয়া ঘুম থেকে উঠে এসে সব উৎসবের সূচনা-সমাপ্তি করলেন। এবং সকলকে তাঁর ‘‘আশির্বাদ-দোয়া’’ দান করলেন। কত গান করলেন। পুরস্কার দিলেন কতজনকে। সবাই আহ্লাদে ষোলোখানা হলেন।

মাননীয়া শিল্প বলতে একটাই অর্থ বুঝলেন। বোঝালেন ঘুম জড়ানো চোখে। হস্তশিল্প কিংবা ভারীশিল্প কিংবা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-চিত্রশিল্প সবই এক হয়ে গেল। ইংরেজি ভাষায় কেবল বিভেদ। শিল্পকে ওরা আর্ট-ইন্ডাস্ট্রিতে পৃথক করেছে। আমরা তেমন নই। দুনিয়ার যেখানে যত ‘‘শিল্প’’ সব এক। সিঙ্গুরে টাটা নেই তো কী হয়েছে। ন্যানো শিল্প নেই তো কী! টাউন হলে চিত্রশিল্প তো আছে। তা বেচেও তো রাজস্ব আদায় হয়। হলও তো এক কোটি ৮৬লক্ষ টাকা! সেই টাকায় রাজ্য চালিয়ে মাননীয়া আবার ঘুমে ডুব দিলেন। আমরা তাঁর হুকুম মাফিক ১০ বছর চুপ করে থাকার ২ বছর পূর্ণ করলাম। উৎসবের আঙ্গিকে।

পারিষদেরা ডগমগ। কী আনন্দ! চতুর্দিকে মাননীয়ার কাট আউট দাঁড় করালেন তাঁরা। ৫০ ফুট। ৬০ ফুট। ৪০ ফুট। পায়ের কাছে, দলা পাকিয়ে, কৃতার্থ মুখে নিজেদের ছবি সেঁটে দিলেন তাঁরা। নীল রং ঢেকে দিল চারদিক। মাননীয়া আইপ্যাড হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। এতো গেল বাহ্যিক দিকটা। অন্তরের অন্দরেও যে মাননীয়া আছেন, তাও জানান দিলেন পারিষদেরা। বললেন বুক ‍‌চিরেও দেখাতে পারেন। তাঁদের ঘরের দেওয়াল আর গাড়ির সামনের আসনে মাননীয়া ২৪x৭ বিরাজিতা। ৩৬৫দিন তৈলাক্ত!

মাননীয়া আনন্দে লাগামছাড়া হন না। ঘুম থেকে মাঝে মাঝে উঠে এসে পারিষদদের পরীক্ষা নেন। কড়াভাষায় বকেন। তাঁদের কাজের নম্বর দেন। দু-একজনকে বাদ দেন। ফলে, একটা শৃঙ্খলিত আনন্দের বাতাবরণ তৈরি হয়। এবং মাননীয়া সেই বাতাবরণের ছবি তোলেন তাঁর আইপ্যাড-এ। পারিষদেরা বিগলিত পোজ-এ ধরা পড়েন ছবিতে। ছবিগুলো ঐতিহাসিক গুরুত্ব পায়। মাননীয়ার ফের ঘুম পায়। কর্ম ঘুম!

মাননীয়া কথা বললেই বাণী। ছবি আঁকলেই দামী। আর ছবি তুললেই তীর্থস্থান। মাসে মাসে পাহাড়ে গিয়ে, যে যে জায়গার ছবি তুলেছেন তিনি, সেই সেই জায়গা আজ স্থান! তীর্থস্থান হয়েছে। সেখানে পৃথিবীর নানান দিক থেকে কাতারে কাতারে মানুষ আসছেন প্রত্যহ। রাজস্ব আদায় হচ্ছে রাজ্যের। তবে তাঁর ছবি বিক্রির টাকার তুলনায় তা নিতান্তই নগণ্য! তাঁর আঁকা ছবির দামে রাজ্য চলে। তোলা ছবির দামে চলে পর্যটন। মাননীয়া একলা চলেন।

মাননীয়া একলা চলেন বটে, তবে সঙ্গে চলেন বহু জ্ঞানী-গুণী স্তাবক। মাননীয়া তাঁদের নুন দেন। তাঁরা নুন খান। এবং নুন খেয়ে মাননীয়ার গুণ গান — বেগুন গুণ গাও! সেই গান ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তারকারা ছুটে আসেন। ‘‘জনগণমনঅধিনায়িকা উপাধিতে ভূষিতা হন মাননীয়া। স্মিত হাস্যে তিনি সকলকে ‘‘আশির্বাদ-দোয়া’’ প্রদান করেন এবং ঘুমে ডুব দেন।

মাননীয়ার কাছে কাজ-ই ঘুম। তিনি ২২ ঘণ্টা কাজ করেন। ২২ ঘণ্টাই তাঁর ঘুম। মাত্র ২ ঘণ্টা জেগে থেকে পার্থিব হাবিজাবি অবিদ্যা-অশিক্ষাগুলো করতে হয় তাঁকে। তাঁর মধ্যে প্রধান হলো সরকার চালানো। বোগাস! ডাল! কোনও তত্ত্বজ্ঞান নেই। আত্মদর্শনের সুযোগ নেই। উৎসব-অনন্দ-পুরস্কারের উল্লাস নেই। কেবল ধর্ষণ-খুন-চিট ফান্ড-চাষীর আত্মহত্যা-পরিবহনকর্মীর আত্মহত্যা-পুলিস খুন-পঞ্চায়েত ভোট — যত সব অবৈদিক বিষয়! ভাল লাগে না একেবারেই। তবু করতে হয়।

এখন জুন মাসের মাঝামাঝি হলো। উঠিলো বাজনাবাজি। পুজোর সময় কানের গোড়ায়। এখন কত কাজ! পারিষদেরা সোনা-রূপো-পিতল-র পুজো করেন। কত আয়োজন। কত না অর্থ। এখন কি না পঞ্চায়েত ভোটের অনর্থ! সইতে চায় না মন। মাননীয়াও তাই গম্ভীর ভীষণ। তিনি যে সকল পূজার কাণ্ডারী। তাঁরই বা সইবে কেন? এসবই হলো ওই মাত্র ২ঘণ্টা জেগে থাকার বালাই। সেই বালাইয়ের কানের গোড়ায় এক থাপ্পড় মেরে, এখন থেকে ২৪ ঘণ্টাই কাজ-ঘুমে ডুব দেবার সিদ্ধান্ত নিলেন মাননীয়া। পারিষদেরা ধন্য ধন্য করলেন।

মাননীয়া এখন কাজ-ঘুমে ডুবন্ত। আবার কখনও ভাসন্ত। তিনি উন্নয়নের ঘুমে ডুব দেন। উৎসবের ভেলায় ভাসেন। আর বাঙালী ভাসে কলার মান্দাসে। তাতে কারো কষ্ট হয়। কান্না পায়। খিদে পায়। মাননীয়া চুপ করে থাকতে বলেছেন ১০ বছর। তাই সবাই চুপ করেই থাকে। কিন্তু দু-একটা বোকা থাকে। তারা তাদের কষ্টের কথা বলতে যায়। মাননীয়ার তাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। যাদের জন্যে তিনি ২৪ঘণ্টা পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছেন, তারাই কিনা চেঁচিয়ে তাঁর ঘুম ভাঙাচ্ছে! পেয়াদারা ছুটে যায়। ধরে বোকাদের। তারপর — তৃতীয় সুর। ষষ্ঠ সুর। বোকারা চলল বহুদূর। হাজতবাস হয় তাদের। মাননীয়া স্বস্তিতে ফের কাজ-ঘুমে ডুব দেন। এবং ঘুমের মধ্য থেকে বাণী দেন — ভাগাড়ের শকুন! উৎসব করব না তো কী করব? শ্রাদ্ধ করব?

বিপুল করতালিতে পারিষদেরা আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলেন। তাঁরা মাননীয়ার ঘুমের খতিয়ান তৈরি করে ছাপতে দেন। মাননীয়া নিশ্চিন্তে ডান পাশ থেকে বাঁ পাশে ফেরেন। তারপর ঘুমে ভাসতে থাকেন।

লোকগাথা — লোকসুর থমকে যায়। সেখানে এক বোকা মাঝির ভাটিয়ালি শোনা যায় — আমায় ডুবাইলি রে। আমায় ভাসাইলি রে। অকুল দরিয়ার বুঝি কূল নাই রে!

বোকা মাঝিটা! তার ডুবে থাকা, ভেসে থাকার যন্ত্রণাকে সাধারণের যন্ত্রণা ভেবে বসে। সে ভাবে মাননীয়াও তো ডোবেন-ভাসেন। দুই-ই বুঝি এক। তার বুদ্ধির দৌড় এতটাই, সেও একটা যন্ত্রণার খতিয়ান তৈরি করে। মূর্খ!

কী আছে তার খতিয়ানে?

১।। ১৯৭৭-এ বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গ্রামবাংলায় অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের প্রসার ঘটিয়েছিল। গোটা দেশে তা মডেল হয়ে ছিল। মমতা ব্যানার্জি তার ওপর আঘাত করেছেন। সেই গণতন্ত্র এখন পঙ্গু। তিনি রাইটার্স থেকে ডি এম-বি ‌ডি ও মারফত পঞ্চায়েত চালাচ্ছেন। উন্নয়নের কাজে গরিব মানুষের আর কোনও ভূমিকা নেই এখন।

২।। মমতা ব্যানার্জি স্বৈরাচারী। তিনি বিরুদ্ধ মত শুনতে পারেন না। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মানেন না। কেবল আঙুল উঁচিয়ে সবাইকে চুপ করিয়ে রাখতে চান। ব্যক্তিকেন্দ্রিক একদলীয় শাসন কায়েম করেছেন তিনি। এখানে বিরোধীরা পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র তুলতে পারেন না। জমা দিতে পারেন না। জমা দিলেও মাননীয়ার পারিষদদের হুমকিতে তা তুলে নিতে বাধ্য হন। শান্তিপূর্ণ-সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন যেন একটা সোনার পাথরবাটি।

৩।। সরকার তৈরির প্রথম দিন থেকেই মমতা ব্যানার্জি বামপন্থী কর্মীদের ওপর আক্রমণ নামিয়েছেন। এ পর্যন্ত খুন হয়েছেন ৯৫জন বাম নেতা-কর্মী। শুধু বর্ধমানেই ১৫জন। অবাম কিন্তু মমতাপন্থী নন, এমন দলের নেতা-কর্মীরাও খুন হচ্ছেন। এমন কি, মমতার দলের লোকেরাও নিজেরা নিজেদের খুন করছেন। মমতার পুলিস ২বছরে ৬বার সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে। মমতার দলের নেতা পুলিসকে পর্যন্ত খুন করেছে। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারতে গেছে।

৪।। মমতা ব্যানার্জি মানবাধিকার কমিশন মানেন না। বিচারপতিসহ গোটা বিচার ব্যবস্থা মানেন না। রাজ্যপাল-নির্বাচন কমিশন-কেউ তাঁর গালাগালির আওতার বাইরে নেই। সংসদীয় নীতি-আইন-সংবিধান—গোটাটাই তাঁর কাছে একটা খেলা!

৫।। মমতা ব্যানার্জির পারিষদদের সব থেকে পছন্দের শিকার মেয়েরা। ধর্ষণ এখন হয় তুচ্ছ ঘটনা কিংবা ছোট্ট ঘটনা কিংবা বিরোধীদের সাজানো গল্প অথবা ধর্ষিতা মেয়েটির ‘‘নষ্ট চরিত্রের পরিণতি’’। মমতা এবং তাঁর পারিষদেরা এমনই বলেন।

৬।। মমতা ব্যানার্জির পারিষদদের সব থেকে সহজলভ্য শিকার শিক্ষকেরা। স্কুলে-কলেজে ঢুকে শিক্ষকদের মারাটা নিত্যদিনের ব্যাপার। যদিও মাননীয়া একে বলেন, ‘‘দুষ্টুমি’’!

৭।। মমতার ২ বছরে রাজ্যের কৃষি-শিল্প, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, পরিষেবা-পরিকাঠামো, বিদ্যুৎ-বন্দর, রাস্তাঘাট-পরিবহন, সম্প্রীতি-সংস্কৃতি, প্রশাসন-কোষাগার— সব ক্ষেত্রেই নৈরাজ্য। বিশৃঙ্খলা। দুর্নীতি। নাভিশ্বাস রাজ্যবাসীর।

এই পর্যন্তই খতিয়ান-এ আছে। এবং —

বোকা মাঝির খতিয়ানের শেষে একটা সাবধান বাণীও আছে —

‘‘মমতা আর একদিনও ক্ষমতায় থাকলে বাংলার সর্বনাশ!’’

- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=42213#sthash.H1KeMGjf.dpuf

No comments:

Post a Comment