Ganashakti
This blog deals with the deep-rooted conspiracy how the rainbow alliance of Maoist-TMC-Congress-SUCI with support and fund of capitalists, land-lords, finance capital, corporate media, imperialists and few sold out perverted intellectuals, so-called human right organizations and anti-national NGOs are bent upon weakening the mainstream leftist movement in India.
(CLICK ON CAPTION/LINK/POSTING BELOW TO ENLARGE & READ)
Saturday, June 29, 2013
এমন একটা প্রজন্ম যার ওপর নির্ভর করা যায়, ভরসা রাখা যায়। যে প্রজন্মকে দেখে গর্বে বুক ভরে যায়। রাজ্যজুড়ে এমন অরাজক পরিস্থিতির মধ্যেও কোন প্রজন্মের ছবি দেখে শুক্রবার মিনাখাঁয় বামফ্রন্টের জনসভায় একথা বললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র? বললেন, কামদুনির মহিলারা যখন টিভিতে কথা বলেন তা দেখে আমার গর্ব হয়। এই প্রজন্মের ওপর ভরসা করা যায়, যাঁরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করতে পারেন। যাঁরা চাকরি, টাকার প্রলোভনকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। এই লড়াইটা জারি রাখতে হবে।
অবরুদ্ধ শাসনে তৃণমূলী দখলদারির মধ্যে একদিনও প্রচার করতে না পারায়, জেলা পুলিসসুপারকে জানিয়েই বৃহস্পতিবার শাসনে বামফ্রন্টের জেলা পরিষদের প্রার্থী আসফ নূরী বেগমের সমর্থনে প্রচারে গিয়েছিলেন মহিলা নেতৃবৃন্দ। পুলিস জানতো। এমনকি যখন প্রকাশ্যে রাস্তায় তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা বামপন্থী মহিলা নেতৃত্বের ওপর হামলা চালাচ্ছে সে খবরও সময়মতই এসেছিল পুলিসের কাছে। শাসন বাজার থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরের পুলিস ফাঁড়ি তবুও পুলিস পৌঁছায়নি ঘটনাস্থলে। শুধু তাই নয়, যখন আক্রান্ত মহিলারা সেই পুলিস ফাঁড়িতে গিয়ে নিরাপত্তা চাইছেন সেই সময় পুলিসের ‘পরামর্শ’, বেশি দেরি করে লাভ নেই আপনারা বরং ফিরে যান। মমতা ব্যানার্জির পুলিসের এই নির্লজ্জ দলতন্ত্রের চেহারাই বৃহস্পতিবার ফের স্পষ্ট হয়েছে শাসনের ঘটনায়। ‘‘ওরা চুলের মুঠি ধরে আমাদের মহিলাদের মারধর, গাড়ি ভাঙচুর করে। চারদিকে সবাই ছুটে পালাতে থাকেন। সে সময় রমলা চক্রবর্তী আমিনপুরের ঐ পুলিস ফাঁড়িতে গিয়ে পুলিসকে সব জানান। উলটে তখন পুলিস বলেছে, আপনারা এখানে এসেছেন তা দেখছে তৃণমূলের লোকজন। আপনারা তাড়াতাড়ি ফিরে যান। এরপর কিছু হলে আমরা দায়িত্ব নিতে পারবো না।’’ বলছিলেন মহিলা নেত্রী রেখা গোস্বামী।
বাংলার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত — বাংলার ঐতিহ্য। গ্রামবাংলার স্থানীয় সরকার। গ্রামের স্থানীয় মানুষের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধিত্বে গঠিত হয়। যার চিন্তা-ভাবনা উন্নয়নের পরিকল্পনা একেবারে মাটির বুক থেকে উঠে আসে। মানুষের উৎসাহ ও প্রয়োজনের নিরিখে। সদর; মহকুমা; ব্লক কর্মচারীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল ছিল না। আমলাতন্ত্র নিয়ন্ত্রিত হতে বাধ্য হয়। এহেন ত্রিস্তরের পঞ্চায়য়েতী ব্যবস্থা ভারতের অন্যান্য রাজ্যের কাছে দৃষ্টান্ত হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার এমনকি একাধিক প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠেও প্রশংসিত হয়েছিল। বাংলার পঞ্চায়েতী সাফল্য দেশের সীমানা অতিক্রম করে বিদেশী অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালকদের আকর্ষণ করেছিল। বহু বিদেশী প্রতিনিধিদল বাংলার গ্রামে গ্রামে এসেছে — সাফল্যের কূল-কিনারা করতে গিয়ে দেখেছে — ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, যাঁদের সমস্যা—সমস্যার দূরীকরণে তাঁদের অংশগ্রহণ। রাজ্য বাজেটের মধ্যে স্থানীয় প্রয়োজনের গৌরবজনক স্থান।
ঋত্বিককুমার ঘটক যখন চলে গেলেন তাঁর দেহ নিয়ে যে তরুণেরা আন্তর্জাতিক সঙ্গীত গাইতে গাইতে সামনে এগোচ্ছিলেন তাঁরা অনেকেই আজ প্রৌঢ় হয়েছেন। সময়টা জরুরী অবস্থা। এশিয়ার মুক্তিসূর্যের তাপ সর্বত্র, অন্তত কলকাতার দেওয়ালে বিচ্ছুরিত হচ্ছে। সারা দেশে, রাজ্যে রাজ্যে বামপন্থীদের ওপর নির্মম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নেমে এসেছে। জেলে এবং বাইরে গুলি করে মারা হচ্ছে প্রতিবাদী বামপন্থীকে। ছিয়াত্তর সালে ঋত্বিকের মৃত্যু যাবতীয় প্রতিবাদের লালচোখ উপেক্ষা করে কলকাতার রাস্তায় আবার ধ্বনিত হলো মহান ইন্টারন্যাশনাল ‘ জাগো জাগো জাগো সর্বহারা ...’
রাজ্যের সাম্প্রতিক নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে সব প্রতিবাদ বিক্ষোভ ধ্বনিত হচ্ছে তাকে মিডিয়ার একাংশ রাজনীতিবর্জিত দেখতে ভীষণভাবে ইচ্ছুক। এইসব মিডিয়া এবং তাদের তাত্ত্বিক উপদেষ্টারা চাইছে যেকোন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদে যেন রাজনীতির ছোঁয়া না থাকে। একাংশ বুদ্ধিজীবী আছেন যারা রাজনীতিকে পছন্দ করতে পারেন না। এমন একটা ভাব দেখান যেন রাজনীতিই যত নষ্টের মূলে। অরাজনৈতিক স্বতস্ফূর্ততা দিয়েই সব সমস্যার সমাধান করে দেওয়া যায়। বাস্তবে কোথাও তেমন ঘটেছে বা ঘটছে বলে কোন নমুনা এইসব অরাজনীতিপ্রেমীদের গোচরেও নেই। কামদুনির ঘটনাসহ রাজ্যজুড়ে মহিলাদের ওপর যে বর্বরতা সংঘটিত হয়েছে এবং রাজ্যে যে জঙ্গলের রাজত্ব কায়েম হয়েছে তার বিরুদ্ধে কলকাতায় এক অভূতপূর্ব মহাপ্রতিবাদ কর্মসূচীর মধ্যে এইসব মিডিয়া এবং বোদ্ধারা প্রতিবাদের ব্যাপ্তি ও গভীরতার সন্ধান না করে খুঁজতে বেরিয়েছে রাজনীতির গন্ধ। এটা আর যাইহোক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অভিব্যক্তি হতে পারে না।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বড় রকমের ধাক্কা খেলো রাজ্য সরকার। শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়েই মিটলো পঞ্চায়েত ভোটের অনিশ্চয়তা। রাজ্য সরকারের সমস্ত বাধাদান কার্যত নস্যাৎ করে দিয়ে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সব চাহিদাকেই বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে। কমিশনের প্রস্তাব মতোই আদালত পাঁচ দফায় ভোটগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে, কমিশনের চাহিদা মতোই বাহিনী মোতায়েনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেও বাহিনী দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। পাঁচ দফা মিলিয়ে সর্বমোট আটশো কোম্পানির বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে তারা।
Friday, June 28, 2013
Sunday, June 23, 2013
মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে শুক্রবার রাতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন সিপিএম কর্মী দেবশরণ ঘোষ (৪২)। গুলিবিদ্ধ আর এক সিপিএম কর্মী অমর ঘোষ (৪৫) মারা যান শনিবার সকালে। একডালা গ্রামে শুক্রবার রাতে কংগ্রেস-সিপিএম সংঘর্ষে জখম হন ওই দু’জন। আন্দুলবেড়িয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থী মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ ও দলীয় কর্মী বৈদ্যনাথ ঘোষও আহত হয়ে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে।”
মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে শুক্রবার রাতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন সিপিএম কর্মী দেবশরণ ঘোষ (৪২)। গুলিবিদ্ধ আর এক সিপিএম কর্মী অমর ঘোষ (৪৫) মারা যান শনিবার সকালে। একডালা গ্রামে শুক্রবার রাতে কংগ্রেস-সিপিএম সংঘর্ষে জখম হন ওই দু’জন। আন্দুলবেড়িয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থী মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ ও দলীয় কর্মী বৈদ্যনাথ ঘোষও আহত হয়ে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে।”
সারদা কেলেঙ্কারিতে সি বি আই তদন্তের আপাতত মুখোমুখি হতে হচ্ছে না রাজ্যের শাসক দলকে। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চ রায় দিয়েছে সারদা কেলেঙ্কারির অনুসন্ধানে রাজ্য সরকার গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)’র ওপরেই ভরসা রাখছে আদালত। তবে এই তদন্ত হবে আদালতের তত্ত্ববধানে। প্রতিমাসে আদালতকে এই তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে রিপোর্ট করতে হবে। সি বি আই তদন্তের দাবি খারিজ না হলেও স্থগিত রাখা হচ্ছে বলে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে। শাসক দলের স্বার্থে রাজ্য সরকার সারদা কেলেঙ্কারিতে সি বি আই তদন্তের বিরোধিতা করে চলছিল। কলকাতা হাইকোর্টের সাম্প্রতিক আদেশের ফলে তৃণমূল নেত্রী সাময়িকভাবে হলেও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।
১৯৭২ থেকে ’৭৭ আধাফ্যাসিস্ত সন্ত্রাসের যুগে গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ করা হয়েছিল। ১৯৭৭-এ বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। বামফ্রন্ট সরকার গণতন্ত্রকে গ্রামস্তরে সম্প্রসারিত করে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। ৩৪বছর সেই গণতন্ত্রকে চোখের মণির মতো রক্ষা করেছিল বামফ্রন্ট। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের পর গত দু’বছরে সেই স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তি হয়েছে পশ্চিম বাংলায়। আধাফ্যাসিস্ত সন্ত্রাসের যুগে বামপন্থী নেতা কর্মীদের খুন করে, জেলে ভরে, সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণ নামিয়ে এনে সন্ত্রস্ত্র করা হয়েছিল গোটা পশ্চিমবঙ্গকে। আর আজ প্রতিদিন বামপন্থী কর্মীরা খুন হচ্ছেন, মিথ্যা মামলায় জেলে যাচ্ছেন আর মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ থেকে সংবাদমাধ্যমের নাম করে আক্রমণ করে ফতোয়া জারি করছেন। সেদিন চিত্তরঞ্জনে খুন হয়েছিলেন শ্রমিক দরদী নেতা কমরেড মিহির দে। আর কিছুদিন আগে খুন হয়ে গেলেন শিল্পাঞ্চলের জনদরদী নেতা কমরেড দিলীপ সরকার। শনিবার চিত্তরঞ্জনে শহীদ কমরেড মিহির দে’র স্মরণসভায় একথা বলেন আভাস রায়চৌধুরী।
Saturday, June 22, 2013
পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার শেষে শুক্রবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে রেজিনগর থানার একডালা গ্রামে নৃশংসভাবে খুন হলেন সি পি আই (এম)’র দুই সদস্য। ঘটনায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েতের সি পি আই (এম) প্রার্থী সহ আরও এক কর্মী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নির্বাচনের মুখে পরিকল্পিতভাবে কংগ্রেস এই খুন করেছে বলে অভিযোগ। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবিবার বেলডাঙা ২ নম্বর ব্লকে ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। এদিন এই ঘটনার প্রতিবাদে গোটা জেলায় ধিক্কার মিছিল ও পথসভা সংগঠিত করা হয়। পুলিস এই ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করলেও এই খুনের ঘটনার পরবর্তী সময়ে পুলিসের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠেছে।
Friday, June 14, 2013
MAMATA BANERNJEE, CHIEF MINISTER: ভাটিয়ালি খতিয়ান
ভাটিয়ালি খতিয়ান
পরাণ মাঝি
মাননীয়া ক্ষমতায় এলেন।
পায়ে হাওয়াই চটি। যেমন সাধারণ মানুষের থাকে তেমন। পরণে সাধারণ কাপড়। যেমন সাধারণ মানুষের থাকে তেমন। মুখে আটপৌরে হাসি। যেমন সাধারণ মানুষের থাকে তেমন। বাঁহাতে বহুমূল্যবান আইপ্যাড। যেমন সাধারণ মানুষের থাকে না। তেমন।
মাননীয়া এসেই সাধারণ মানুষের স্বার্থে, বামপন্থীদের চুপ করে থাকতে বললেন ১০ বছর। তারপর তিনি কাজে ডুব দিলেন। এবং ডুবন্ত অবস্থায় ভাতঘুম দিলেন। এবং ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেলেন পাঁচ বছরের কাজ এক বছরেই হয়ে গেছে। বাকি চার বছরের কথা ভেবে ঘুম আরও গভীর হলো। সেই গভীরে গিয়ে হাজির হলেন মাননীয়ার যত পারিষদ। সকলেই উল্লসিত। লেটস্ সেলিব্রেট!
দিকে দিকে উৎসব শুরু হলো। জামা-কাপড় উৎসব। ঘটি-বাটি উৎসব। মা-মাটি উৎসব। ইলিশ-চিংড়ি উৎসব। টলি-বলি উৎসব। মানুষ-ফানুস উৎসব। শিল্প-শিল্প উৎসব। কত উৎসব! শেষ নেই।
মাননীয়া ঘুম থেকে উঠে এসে সব উৎসবের সূচনা-সমাপ্তি করলেন। এবং সকলকে তাঁর ‘‘আশির্বাদ-দোয়া’’ দান করলেন। কত গান করলেন। পুরস্কার দিলেন কতজনকে। সবাই আহ্লাদে ষোলোখানা হলেন।
মাননীয়া শিল্প বলতে একটাই অর্থ বুঝলেন। বোঝালেন ঘুম জড়ানো চোখে। হস্তশিল্প কিংবা ভারীশিল্প কিংবা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-চিত্রশিল্প সবই এক হয়ে গেল। ইংরেজি ভাষায় কেবল বিভেদ। শিল্পকে ওরা আর্ট-ইন্ডাস্ট্রিতে পৃথক করেছে। আমরা তেমন নই। দুনিয়ার যেখানে যত ‘‘শিল্প’’ সব এক। সিঙ্গুরে টাটা নেই তো কী হয়েছে। ন্যানো শিল্প নেই তো কী! টাউন হলে চিত্রশিল্প তো আছে। তা বেচেও তো রাজস্ব আদায় হয়। হলও তো এক কোটি ৮৬লক্ষ টাকা! সেই টাকায় রাজ্য চালিয়ে মাননীয়া আবার ঘুমে ডুব দিলেন। আমরা তাঁর হুকুম মাফিক ১০ বছর চুপ করে থাকার ২ বছর পূর্ণ করলাম। উৎসবের আঙ্গিকে।
পারিষদেরা ডগমগ। কী আনন্দ! চতুর্দিকে মাননীয়ার কাট আউট দাঁড় করালেন তাঁরা। ৫০ ফুট। ৬০ ফুট। ৪০ ফুট। পায়ের কাছে, দলা পাকিয়ে, কৃতার্থ মুখে নিজেদের ছবি সেঁটে দিলেন তাঁরা। নীল রং ঢেকে দিল চারদিক। মাননীয়া আইপ্যাড হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। এতো গেল বাহ্যিক দিকটা। অন্তরের অন্দরেও যে মাননীয়া আছেন, তাও জানান দিলেন পারিষদেরা। বললেন বুক চিরেও দেখাতে পারেন। তাঁদের ঘরের দেওয়াল আর গাড়ির সামনের আসনে মাননীয়া ২৪x৭ বিরাজিতা। ৩৬৫দিন তৈলাক্ত!
মাননীয়া আনন্দে লাগামছাড়া হন না। ঘুম থেকে মাঝে মাঝে উঠে এসে পারিষদদের পরীক্ষা নেন। কড়াভাষায় বকেন। তাঁদের কাজের নম্বর দেন। দু-একজনকে বাদ দেন। ফলে, একটা শৃঙ্খলিত আনন্দের বাতাবরণ তৈরি হয়। এবং মাননীয়া সেই বাতাবরণের ছবি তোলেন তাঁর আইপ্যাড-এ। পারিষদেরা বিগলিত পোজ-এ ধরা পড়েন ছবিতে। ছবিগুলো ঐতিহাসিক গুরুত্ব পায়। মাননীয়ার ফের ঘুম পায়। কর্ম ঘুম!
মাননীয়া কথা বললেই বাণী। ছবি আঁকলেই দামী। আর ছবি তুললেই তীর্থস্থান। মাসে মাসে পাহাড়ে গিয়ে, যে যে জায়গার ছবি তুলেছেন তিনি, সেই সেই জায়গা আজ স্থান! তীর্থস্থান হয়েছে। সেখানে পৃথিবীর নানান দিক থেকে কাতারে কাতারে মানুষ আসছেন প্রত্যহ। রাজস্ব আদায় হচ্ছে রাজ্যের। তবে তাঁর ছবি বিক্রির টাকার তুলনায় তা নিতান্তই নগণ্য! তাঁর আঁকা ছবির দামে রাজ্য চলে। তোলা ছবির দামে চলে পর্যটন। মাননীয়া একলা চলেন।
মাননীয়া একলা চলেন বটে, তবে সঙ্গে চলেন বহু জ্ঞানী-গুণী স্তাবক। মাননীয়া তাঁদের নুন দেন। তাঁরা নুন খান। এবং নুন খেয়ে মাননীয়ার গুণ গান — বেগুন গুণ গাও! সেই গান ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তারকারা ছুটে আসেন। ‘‘জনগণমনঅধিনায়িকা উপাধিতে ভূষিতা হন মাননীয়া। স্মিত হাস্যে তিনি সকলকে ‘‘আশির্বাদ-দোয়া’’ প্রদান করেন এবং ঘুমে ডুব দেন।
মাননীয়ার কাছে কাজ-ই ঘুম। তিনি ২২ ঘণ্টা কাজ করেন। ২২ ঘণ্টাই তাঁর ঘুম। মাত্র ২ ঘণ্টা জেগে থেকে পার্থিব হাবিজাবি অবিদ্যা-অশিক্ষাগুলো করতে হয় তাঁকে। তাঁর মধ্যে প্রধান হলো সরকার চালানো। বোগাস! ডাল! কোনও তত্ত্বজ্ঞান নেই। আত্মদর্শনের সুযোগ নেই। উৎসব-অনন্দ-পুরস্কারের উল্লাস নেই। কেবল ধর্ষণ-খুন-চিট ফান্ড-চাষীর আত্মহত্যা-পরিবহনকর্মীর আত্মহত্যা-পুলিস খুন-পঞ্চায়েত ভোট — যত সব অবৈদিক বিষয়! ভাল লাগে না একেবারেই। তবু করতে হয়।
এখন জুন মাসের মাঝামাঝি হলো। উঠিলো বাজনাবাজি। পুজোর সময় কানের গোড়ায়। এখন কত কাজ! পারিষদেরা সোনা-রূপো-পিতল-র পুজো করেন। কত আয়োজন। কত না অর্থ। এখন কি না পঞ্চায়েত ভোটের অনর্থ! সইতে চায় না মন। মাননীয়াও তাই গম্ভীর ভীষণ। তিনি যে সকল পূজার কাণ্ডারী। তাঁরই বা সইবে কেন? এসবই হলো ওই মাত্র ২ঘণ্টা জেগে থাকার বালাই। সেই বালাইয়ের কানের গোড়ায় এক থাপ্পড় মেরে, এখন থেকে ২৪ ঘণ্টাই কাজ-ঘুমে ডুব দেবার সিদ্ধান্ত নিলেন মাননীয়া। পারিষদেরা ধন্য ধন্য করলেন।
মাননীয়া এখন কাজ-ঘুমে ডুবন্ত। আবার কখনও ভাসন্ত। তিনি উন্নয়নের ঘুমে ডুব দেন। উৎসবের ভেলায় ভাসেন। আর বাঙালী ভাসে কলার মান্দাসে। তাতে কারো কষ্ট হয়। কান্না পায়। খিদে পায়। মাননীয়া চুপ করে থাকতে বলেছেন ১০ বছর। তাই সবাই চুপ করেই থাকে। কিন্তু দু-একটা বোকা থাকে। তারা তাদের কষ্টের কথা বলতে যায়। মাননীয়ার তাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। যাদের জন্যে তিনি ২৪ঘণ্টা পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছেন, তারাই কিনা চেঁচিয়ে তাঁর ঘুম ভাঙাচ্ছে! পেয়াদারা ছুটে যায়। ধরে বোকাদের। তারপর — তৃতীয় সুর। ষষ্ঠ সুর। বোকারা চলল বহুদূর। হাজতবাস হয় তাদের। মাননীয়া স্বস্তিতে ফের কাজ-ঘুমে ডুব দেন। এবং ঘুমের মধ্য থেকে বাণী দেন — ভাগাড়ের শকুন! উৎসব করব না তো কী করব? শ্রাদ্ধ করব?
বিপুল করতালিতে পারিষদেরা আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলেন। তাঁরা মাননীয়ার ঘুমের খতিয়ান তৈরি করে ছাপতে দেন। মাননীয়া নিশ্চিন্তে ডান পাশ থেকে বাঁ পাশে ফেরেন। তারপর ঘুমে ভাসতে থাকেন।
লোকগাথা — লোকসুর থমকে যায়। সেখানে এক বোকা মাঝির ভাটিয়ালি শোনা যায় — আমায় ডুবাইলি রে। আমায় ভাসাইলি রে। অকুল দরিয়ার বুঝি কূল নাই রে!
বোকা মাঝিটা! তার ডুবে থাকা, ভেসে থাকার যন্ত্রণাকে সাধারণের যন্ত্রণা ভেবে বসে। সে ভাবে মাননীয়াও তো ডোবেন-ভাসেন। দুই-ই বুঝি এক। তার বুদ্ধির দৌড় এতটাই, সেও একটা যন্ত্রণার খতিয়ান তৈরি করে। মূর্খ!
কী আছে তার খতিয়ানে?
১।। ১৯৭৭-এ বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গ্রামবাংলায় অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের প্রসার ঘটিয়েছিল। গোটা দেশে তা মডেল হয়ে ছিল। মমতা ব্যানার্জি তার ওপর আঘাত করেছেন। সেই গণতন্ত্র এখন পঙ্গু। তিনি রাইটার্স থেকে ডি এম-বি ডি ও মারফত পঞ্চায়েত চালাচ্ছেন। উন্নয়নের কাজে গরিব মানুষের আর কোনও ভূমিকা নেই এখন।
২।। মমতা ব্যানার্জি স্বৈরাচারী। তিনি বিরুদ্ধ মত শুনতে পারেন না। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মানেন না। কেবল আঙুল উঁচিয়ে সবাইকে চুপ করিয়ে রাখতে চান। ব্যক্তিকেন্দ্রিক একদলীয় শাসন কায়েম করেছেন তিনি। এখানে বিরোধীরা পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র তুলতে পারেন না। জমা দিতে পারেন না। জমা দিলেও মাননীয়ার পারিষদদের হুমকিতে তা তুলে নিতে বাধ্য হন। শান্তিপূর্ণ-সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন যেন একটা সোনার পাথরবাটি।
৩।। সরকার তৈরির প্রথম দিন থেকেই মমতা ব্যানার্জি বামপন্থী কর্মীদের ওপর আক্রমণ নামিয়েছেন। এ পর্যন্ত খুন হয়েছেন ৯৫জন বাম নেতা-কর্মী। শুধু বর্ধমানেই ১৫জন। অবাম কিন্তু মমতাপন্থী নন, এমন দলের নেতা-কর্মীরাও খুন হচ্ছেন। এমন কি, মমতার দলের লোকেরাও নিজেরা নিজেদের খুন করছেন। মমতার পুলিস ২বছরে ৬বার সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে। মমতার দলের নেতা পুলিসকে পর্যন্ত খুন করেছে। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারতে গেছে।
৪।। মমতা ব্যানার্জি মানবাধিকার কমিশন মানেন না। বিচারপতিসহ গোটা বিচার ব্যবস্থা মানেন না। রাজ্যপাল-নির্বাচন কমিশন-কেউ তাঁর গালাগালির আওতার বাইরে নেই। সংসদীয় নীতি-আইন-সংবিধান—গোটাটাই তাঁর কাছে একটা খেলা!
৫।। মমতা ব্যানার্জির পারিষদদের সব থেকে পছন্দের শিকার মেয়েরা। ধর্ষণ এখন হয় তুচ্ছ ঘটনা কিংবা ছোট্ট ঘটনা কিংবা বিরোধীদের সাজানো গল্প অথবা ধর্ষিতা মেয়েটির ‘‘নষ্ট চরিত্রের পরিণতি’’। মমতা এবং তাঁর পারিষদেরা এমনই বলেন।
৬।। মমতা ব্যানার্জির পারিষদদের সব থেকে সহজলভ্য শিকার শিক্ষকেরা। স্কুলে-কলেজে ঢুকে শিক্ষকদের মারাটা নিত্যদিনের ব্যাপার। যদিও মাননীয়া একে বলেন, ‘‘দুষ্টুমি’’!
৭।। মমতার ২ বছরে রাজ্যের কৃষি-শিল্প, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, পরিষেবা-পরিকাঠামো, বিদ্যুৎ-বন্দর, রাস্তাঘাট-পরিবহন, সম্প্রীতি-সংস্কৃতি, প্রশাসন-কোষাগার— সব ক্ষেত্রেই নৈরাজ্য। বিশৃঙ্খলা। দুর্নীতি। নাভিশ্বাস রাজ্যবাসীর।
এই পর্যন্তই খতিয়ান-এ আছে। এবং —
বোকা মাঝির খতিয়ানের শেষে একটা সাবধান বাণীও আছে —
‘‘মমতা আর একদিনও ক্ষমতায় থাকলে বাংলার সর্বনাশ!’’
- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=42213#sthash.H1KeMGjf.dpuf
AJIT PANDEY, COMMUNIST SINGER, NO MORE
গান থামালেন অজিত পাণ্ডে
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা, ১৩ই জুন — চলে গেলেন কমরেড অজিত পাণ্ডে। হাটে-মাঠে-ঘাটে অক্লান্ত গান গেয়ে যাওয়া বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী অজিত পাণ্ডের জীবনাবসান হয়েছে বৃহস্পতিবার সকালে। সকালে কালিকাপুর অহল্যানগরের বাড়িতে প্রতিদিনের মতো বাইরের ঘরে বসে চা খেয়ে খবরের কাগজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ঘড়িতে তখন ৯-১০ মিনিট। পাশেই ছিলেন স্ত্রী ও ছেলে। চিকিৎসার কোনো সুযোগই মেলেনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৫। রেখে গেলেন স্ত্রী গায়ত্রী পাণ্ডে, একমাত্র ছেলে অগ্নি পাণ্ডে সহ অসংখ্য গুণমুগ্ধদের।
তাঁর মৃত্যু সংবাদে বাড়িতে ছুটে আসেন সি পি আই (এম) নেতা রবীন দেব, কান্তি গাঙ্গুলি, রমলা চক্রবর্তী সহ অনেকেই। শেষ শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। এছাড়া শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে যান গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের পক্ষে অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়, গণনাট্য সঙ্ঘের পক্ষে তরুণ গুপ্ত, বেণু চট্টোপাধ্যায়সহ শিল্পী-সাহিত্যিক-সঙ্গীত জগতের অসংখ্য মানুষ।
অজিত পাণ্ডের জীবনাবসানে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বিমান বসু এদিন গভীর শোক জানিয়ে বলেন, অজিত পাণ্ডেকে বহু বছর ধরে চিনতাম। কেশোরাম রেয়নের একজন শ্রমিক থেকে তিনি গণসঙ্গীতের প্রশস্ত অঙ্গনে এসে বহুদিন সাফল্যের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। আবার আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে অনুপ্রাণিতও হয়েছেন। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন আন্দোলন-সংগ্রামের চারণকবি। চাসনালার শ্রমিকের জীবনযন্ত্রণা মূর্ত হয়ে উঠেছিল এই চারণকবির গলায়। ভিয়েতনামের বুকে সাম্রাজ্যবাদী অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তিনি নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। তিনি একবার বিধায়ক হয়েছিলেন। বিধায়ক হওয়ার পরেও তাঁর জীবনচর্যার কোনও পরিবর্তন হয়নি। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে, শোষণ ও বঞ্চনার প্রতিবাদে অজিত পাণ্ডে গণসঙ্গীতের মাধ্যমে গণ-আন্দোলনকে পুষ্ট করেছেন। তাঁর চলে যাওয়ার ফলে গণসঙ্গীত ও গণ-আন্দোলনের ক্ষতি হলো। আমি তাঁর ছেলে অগ্নি পাণ্ডে ও পরিবার-পরিজনকে আন্তরিক সমবেদনা জানাই।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, অজিত পাণ্ডে ভীষণ জনপ্রিয় একজন শিল্পী ছিলেন। পরিবেশ ও পরিস্থিতির উপযোগী গান বাছার একটা অদ্ভুত দক্ষতা ছিল তাঁর। খুবই পরিশ্রমী শিল্পী ছিলেন। প্রয়োজনে মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতে পারতেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে, গরিব মানুষের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিশে যেতে পারতেন। তিনি সঙ্গীতচর্চা করেছেন, আবার প্রত্যক্ষ রাজনীতিও করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে একটা বড় শূন্যতা তৈরি হলো। প্রবীণ সি পি আই (এম) নেতা বিনয় কোঙার শোক জানিয়ে বলেন, ছয়ের দশক থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। সেই সময় মেমারিতে পার্টির বিভিন্ন কর্মসূচীতে তিনি গণসঙ্গীত পরিবেশন করতে এসেছিলেন। তাঁর গলায় ‘ও নুরুলের মা’ গানটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তাঁর পরিবারের সকলের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইলো।
পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অনুনয় চট্টোপাধ্যায় ও ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন এক শোকবার্তায় বলেন, বাংলার সাংস্কৃতিক জগতের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব প্রখ্যাত গণসঙ্গীত শিল্পী অজিত পাণ্ডের জীবনাবসানে আমরা শোকস্তব্ধ। লেখক শিল্পী সঙ্ঘের সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। বামপন্থী ও প্রগতিশীল চিন্তাচেতনায় তিনি সমৃদ্ধ ছিলেন এবং আজীবন তাঁকে বহমান রেখেছেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের রাজ্য কমিটি। পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী ও লোকশিল্পী সঙ্ঘের রাজ্য সম্পাদক মুজফ্ফর হোসেন অজিত পাণ্ডের মৃত্যুতে গভীর শোক জ্ঞাপন করেন।
বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সৈনিক প্রয়াত শিল্পী ছিলেন সি পি আই (এম)-র সদস্য। ১৯৯৮ সালে কলকাতার বউবাজার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তিনি বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। বিধায়ক হিসেবে ছিলেন ২০০১ সালের মে মাস পর্যন্ত।
অঙ্গীকার করেছিলেন মরণোত্তর চক্ষু ও দেহদানের। সেই কথা মতো এদিন দুপুর ২টা নাগাদ শঙ্কর নেত্রালয়ের সদস্যরা আসেন বাড়িতে। স্ত্রী, ছেলে সহ অসংখ্য আত্মীয়রা তখন হাজির। ওঁরা চক্ষু সংগ্রহ করার পরই পরবর্তী কর্মসূচী স্থির হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলেই প্রয়াত শিল্পীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বউবাজার থানার বো স্ট্রিটের ‘মাদেরা’ দেহ সংরক্ষণ কেন্দ্রে। এখানেই থাকবে মরদেহ। শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ মরদেহ আনা হবে কালিকাপুর অহল্যানগরের শিল্পীর বাসভবনে। এখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সি পি আই (এম) রাজ্য দপ্তরে। এখানেই শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন রাজ্য নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন গণসংগঠন ও সাধারণ মানুষ। এরপর মরদেহ বিধানসভা ভবন হয়ে পৌঁছবে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ওখানেই মরদেহ তুলে দেওয়া হবে কর্তৃপক্ষের হাতে।
অজিত পাণ্ডের মৃত্যুতে শোকাহত মুর্শিদাবাদ। তাঁর জন্মভূমি লালগোলাও শোকস্তব্ধ। জেলার সাংস্কৃতিক আন্দোলন, গণআন্দোলনের কর্মীরাও শোকাহত। সি পি আই (এম) মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য শোকবার্তায় বলেন, রাজ্যের এক কঠিন সময়ে অজিত পাণ্ডের মতো একজন মানুষের মৃত্যু গণআন্দোলনের কর্মীদের কাছেও বড় বেদনার। তিনি তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানান।
শোক জানিয়ে শিল্পী শুভেন্দু মাইতি বলেছেন, নানা সঙ্কট, বিপদের মধ্যেও বামপন্থার প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন সারা জীবন। মানুষের লড়াইকে শ্রদ্ধা করতেন অজিত পাণ্ডে। তাই লড়াইয়ের ময়দানে গান গাইতে ডাকলে না করতেন না। অসুস্থ শরীরেও ছুটে যেতেন। তাঁর চাসনালার গান তো ইতিহাস হয়ে আছে। এছাড়া লালনের গানকেও যথেষ্ট মর্যাদা দিয়ে গাইতেন। শোনাতেন লোকসঙ্গীত, রবীন্দ্রনাথের গান। ওঁর পরিবেশনের ঢঙটাই ছিল অন্যরকম। গীতিকার নন্দদুলাল আচার্য বলেন, আমার লেখা অনেকগুলি গানে উনি সুর করে গেয়েছেন। অনবদ্য সে সুর আর পরিবেশন। একা মানুষ মঞ্চ দখল করে রাখতেন অনেক সময়। এই জন্যই তিনি ব্যতিক্রমী শিল্পী, ব্যতিক্রমী মানুষ। সংগ্রাম থেকে কখনো পিছু ফেরেননি।
তাঁর কথা: মানুষের লড়াইয়ের শরিক ছিলেন সারাটা জীবন। সে লড়াইয়ের হাতিয়ার ছিল গান। বরাবরই চাইতেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে গান শোনাতে। পরোয়া করতেন না, যারা গান গাইতে দেয় না তাদের। কখনো রাজনৈতিক মঞ্চ, কখনো পাড়ার জলসা, কখনো খনি এলাকার মানুষজনের সামনে গান গেয়েছেন উদাত্ত কণ্ঠে। বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শরিক ছিলেন আজীবন। ছয়ের দশকে ঝরিয়া, রানীগঞ্জ এলাকার খনি অঞ্চলে বিভিন্ন গণআন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। সাথী ছিল গণসঙ্গীত। পরবর্তী সময়ে তারই এক স্ফূরণ দেখা দিয়েছিল ‘চাসনালা খনিতে’ গানটিতে। সেটা সাতের দশক। উদাত্ত কণ্ঠে গাইতেন ‘ওরা জীবনের গান গাইতে দেয় না।’ মঞ্চ কাঁপানো সেইসব গানই শোনা যেতো কখনো শহর, কখনো গ্রামবাংলার বুকে। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল’ কবিতাটি গান হয়ে তাঁর কণ্ঠে পেয়েছিল অন্য মাত্রা।
জন্ম ১৯৩৭ সালের ১০ই মার্চ মুর্শিদাবাদের লালগোলায়। বাড়িতে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের চর্চা ছিল। সেই প্রভাব পড়েছিল শিল্পীর মননে। জীবনের সংগ্রামও জড়িয়ে ছিল গান গাওয়ার মতো। বাড়ির অবস্থা খুব একটা স্বচ্ছল ছিল না। ফলে অনেকরকম কাজই করতে হয়েছে। এক সময় হুগলীর বাঁশবেড়িয়ায় কেশোরাম রেয়নের কর্মী ছিলেন। রক্তে যার গান তার কি ভিন্ন পেশা কাজে লাগে? লাগেনি বলেই ছয়ের দশক থেকে নেমে পড়লেন গণসঙ্গীত নিয়ে। জানতেন সেখানে অনেক প্রতিকূলতা, অনেক ঝড়-ঝাপটা, আঘাত; তবুও হার মানেননি। গণসঙ্গীতকেই পরম সাথী করে নেমেছিলেন সংগ্রামের ময়দানে। ছয়ের দশক থেকে সাতের দশকের সেইসব ঝোড়ো দিনে প্রগতির ময়দান থেকে পিছু হটেননি। এর জন্য তাঁকে অনেকবার কারাবরণও করতে হয়েছে। তবুও নতিস্বীকার নয়, সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনের মঞ্চে গানই ছিল তাঁর অন্যতম হাতিয়ার। কয়লা খনি শ্রমিকদের স্বার্থে গান গেয়েছেন, আবার কখনো শোনা গেছে দীনেশ দাস, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সুকান্ত ভট্টাচার্য, অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়, নন্দদুলাল আচার্যের কবিতার গান। বেশির ভাগ গানেই সুর দিয়েছেন। ১৯৭৬ সালে প্রথম রেকর্ড বেরিয়েছিল ইনরেকো থেকে। তাতে কবিদের কবিতা নিয়ে গান করেছিলেন অজিত পাণ্ডে। তাঁর বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে ‘চাসনালা খনিতে’, ‘ওরা জীবনের গান গাইতে দেয় না’, ‘জারে কাঁপছে আমার গা’, ‘লদী শুখা পুখর শুখা’, ‘দুখু মিঞা হে’, ‘চন্দন পিঁড়ির অহল্যা মা’, ‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়’ ‘ও নুরুলের মা’ প্রভৃতি। গীতিকার নন্দদুলাল আচার্যর প্রায় ২০টি গান তিনি সুর করে গেয়ে খ্যাতি পেয়েছেন। গণসঙ্গীতের ধারায় নতুন এক কণ্ঠ। সে কণ্ঠ আর দশজনের মতো নয়। কবিতায় সুরারোপ করে তা মানুষের মাঝে গেয়ে যে বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়া যায় তার অন্যতম উদাহরণ শিল্পী। বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ডাক পেলেই ছুটে যেতেন। গণসঙ্গীতকে যে অনেকের কাছে, অনেকের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তার বড়সড় উদাহরণ তিনি। শুধু গণসঙ্গীত নয়, পাশাপাশি গেয়েছেন লালনের গান, রবীন্দ্রনাথের গান, নজরুলের গান। লালনের গানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিশ্রমী ছিলেন। নিয়মিত চর্চাও করতেন। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘লেনিন’-কে নিয়ে লেখা একটি কবিতার সুরারোপ করে বিপুল প্রশংসা পান। দর্শকরা উদ্বেল হয়েছেন গণসঙ্গীতের সঙ্গে এই ধরনের কবিতার গীতিরূপে।
গানকে পেশা হিসেবে নেওয়ার মধ্যে যে অনেক ঝক্কি তা তিনি জানতেন। সময়ে সময়ে পারিশ্রমিকও মিলতো না। বলতেন, মানুষকে অনেক গান শোনাবো তার জন্য সর্বদাই পারিশ্রমিক মানায় না। ছাত্র-যুব আন্দোলন থেকে গণসংগ্রামের পরিধিতে একটা কথা চালু ছিল: কিছুই নেই ফান্ডে/ আছেন অজিত পাণ্ডে। নিজেই মজা করে বলতেন, এই ছন্দটা আমার মোটেই খারাপ লাগে না। ছয়ের দশকে বিশেষভাবে যুক্ত ছিলেন ‘নন্দন’ পত্রিকার সঙ্গে। এছাড়া যুক্ত ছিলেন অনেক গণসংগঠনের সঙ্গে। একটা কথা বলতেন, যেখানেই থাকি বামপন্থা হাতছানি দিয়ে ডাকে।
দীর্ঘদিন ছিলেন মলঙ্গা লেনের ছোট্ট বাড়িতে। ২০০৩ সালে বাড়ি করে চলে যান কালিকাপুরের অহল্যানগরে। আমৃত্যু এই বাড়িতেই ছিলেন।
বিভিন্ন সময় পাড়ি দিয়েছেন রাশিয়া, বার্লিন, ভিয়েতনামসহ বেশ কয়েকটি দেশে গানের সুবাদে। যেখানেই গেছেন জয় করেছেন শ্রোতার হৃদয়।
আরাবুল মডেলের মানে টের পেয়েছেন ভাঙড়ের বাসিন্দারা। তবুও একপেশে আত্মসমপর্ণ নয়। আরাবুলের খাসতালুকেই কান পাতলে এখন শোনা যাচ্ছে মহিলাদের প্রতিরোধের ঘটনাও। নির্বাচন কমিশনকে সময়ে সময়ে ফ্যাক্স মারফত ঘটনা জানিয়েছে বামফ্রন্ট নেতৃত্বও। শহরের প্রান্তে এই এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্টের প্রার্থীপদ ধরে রাখতে মধ্যরাতে আল পেরিয়ে, খানা খন্দ পার হয়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে অজানা জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়েছে মহিলা প্রার্থীদের। এই ঘটনাও গাজোয়ারির সেই ভাঙড়ে।
কামদুনি গ্রাম শিপ্রার নৃশংস হত্যাকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু মতিয়ার সাঁপুইয়ের বক্তব্য? না, কামদুনি বিশ্বাসই করতে পারছে না। তিনি কি যে সে লোক? তাঁর ফোনে নড়ে চড়ে বসেন উত্তর ২৪পরগনার তাবড় পুলিস অফিসাররা। আই সি, এস ডি পি ও ছুটে আসেন। পুলিস সুপার মন দিয়ে, ধৈর্য ধরে শোনেন। মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বড় ভরসার লোক তিনি। কারণ— আস্ত বারাসত ২নং পঞ্চায়েত সমিতি আর চার-চারটি পঞ্চায়েত দখল হয়ে যায় দিনের আলোয়, রাতারাতি। শুধু তিনি চেয়েছেন বলেই। তিনিই মতিয়ার সাঁপুই।
Thursday, June 13, 2013
Wednesday, June 12, 2013
Friday, June 7, 2013
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী সমীপে, রাজনীতিগতভাবে যে পক্ষেই থাকি না কেন, সরকারী কোন পদে থাকি বা না থাকি, পশ্চিমবঙ্গকে, মানে আমাদের প্রিয় বাংলাকে সত্যি সত্যিই ভালবাসি। তবে নিশ্চয়ই আপনার মতো অত গভীর নয়, তবুও পশ্চিমবঙ্গের যে কোন ভালমন্দ আমাদের মনোজগতে গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যে দলই সরকারে থাক না কেন, যিনিই মুখ্যমন্ত্রী হোন না কেন, পশ্চিমবঙ্গ কোন ব্যক্তি বা দলের হতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গ আমার, আপনার, সকলের। যে কোন বিষয়ে বাংলার সাফল্যে আমরা আনন্দিত হই, গর্বিত হই।
কেন্দ্রীয় বাহিনী মিলবে না। বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকে এহেন ঘোষণার পরে হামলার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে শাসক তৃণমূল। আদালত, নির্বাচন কমিশনের সুপারিশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলছে শাসক দলের নির্বিচার হামলা। সরকারী মদতেই, দর্শকের ভূমিকায় রাজ্যের পুলিস প্রশাসন। চলছে মারধর, আক্রমণ, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ। কিন্তু তা সত্ত্বেও মনোয়নপত্র দাখিল করার চেষ্টা চলছে প্রার্থীদের।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার মনোনয়ন পর্ব চলছে রাজ্যজুড়ে। সেই মনোনয়নপর্বে বামপন্থীদের ঠেকাতে সন্ত্রাসের পাশাপাশি এবার চলছে প্রথম দফার বামফ্রন্ট প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের চেষ্টায় হুমকি, শাসানি, মারধর। আত্মসমর্পণ করছেন না বামফ্রন্ট প্রার্থীরা। তীব্র সন্ত্রাসের মুখেও অদম্য জেদ নিয়েই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন বামফ্রন্ট প্রার্থীরা।
Subscribe to:
Posts (Atom)